Lacrosse Game :
★ল্যাক্রোস খেলার বিবর্তন ইতিহাসঃ
ল্যাক্রোস খেলাটি বহু শতাব্দী ধরে বিস্তৃত একটি চিত্তাকর্ষক ইতিহাস নিয়ে গর্ব করে।
ল্যাক্রোস একটি আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির স্বীকৃত অলিম্পিক খেলা যা বিশ্বের শতাধিক দেশে খেলা হয়।
খেলাটি আন্তর্জাতিক পর্যায় সর্বোচ্চ সংগঠন ওয়ার্ল্ড ল্যাক্রোস এবং এশিয়ায়, “এশিয়া পেসিফিক ল্যাক্রোস” এর অধিনে বিভিন্ন দেশের জাতীয় ফেডারেশনগুলো পরিচালিত হয়।
১৯০৪/১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে ল্যাক্রোসকে সেন্ট লুইস এবং লন্ডনের অলিম্পিক গেমসে অন্তর্ভুক্ত করে খেলা হয়েছিল। পরবর্তীতে ১৯২৮/১৯৩২/১৯৪৮ সালে ল্যাক্রোসকে তিনটি অতিরিক্ত অলিম্পিক গেমসে একটি প্রদর্শনী খেলা হিসেবে দেখানো হয়েছিল।
পুনরায় আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি, লস অ্যাঞ্জেলেসে ২০২৮ সালের অলিম্পিক গেমসে ল্যাক্রোসের অন্তর্ভুক্তির অনুমোদন দিয়ে, খেলাটিকে অলিম্পিক মঞ্চে ফিরিয়ে আনার জন্য ওয়ার্ল্ড ল্যাক্রোসের কয়েক দশক-দীর্ঘ দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবায়িত করেছে।
ল্যাক্রোস এর উৎপত্তি ১২ শতকের গোড়ার দিকে, একটি প্রাচীন উপজাতীয় খেলা থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডা এর পূর্বাঞ্চলীয় স্থানীয় আমেরিকার উডল্যান্ডস এবং কিছু সমতল ইন্ডিয়ান উপজাতিদের দ্বারা তৈরি। ল্যাক্রোস প্রায়শই যুদ্ধের জন্য আচার এবং প্রশিক্ষণ হিসাবে প্রদর্শিত হত,খেলাটি উল্লেখযোগ্য সাংস্কৃতিক এবং আধ্যাত্মিক গুরুত্ব বহন করে,এই প্রাথমিক পুনরাবৃত্তিগুলি বিনোদনের চেয়ে বেশি ছিল।
সেখানে শত শত দেশি পুরুষ লাঠি হাতে বল খেলা খেলছিল। খেলা শুরু হয় বলটি বাতাসে ছুড়ে ফেলার মাধ্যমে এবং দুই পক্ষই দুই পাস হতে তা ধরতে ছুটে যায়।
বিপুল সংখ্যক খেলোয়াড় জড়িত থাকার কারণে, এই গেমগুলিতে সাধারণত খেলোয়াড়দের একটি বিশাল জনসমাগম জড়িত থাকার প্রবণতা ছিল যা বল হাতে নিয়ে ধীরে ধীরে মাঠ জুড়ে চলতো।
একজন খেলোয়াড় হতে আরেকজনের কাছে বল পাস করাকে একটি কৌশল হিসাবে বিবেচনা করা হত এবং প্রতিপক্ষকে ফাঁকি দেওয়া কাপুরুষতা হিসাবে দেখা হত।
আদিবাসীরা তাদের সাধারণ পোশাক পরত এবং কাঠের লাঠি ব্যবহার করত, ১-২ কিলোমিটার মাঠে তারা প্রতিটি দলে ১০০-১০০০ খেলোয়াড় নিয়ে ল্যাক্রোস খেলা খেলত।
১৬০০ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি জেসুইট মিশনারিরা প্রথম পশ্চিমারা যারা খেলাটি প্রত্যক্ষ করেছিল এবং খেলাটির নামকরণ করেছিল ল্যাক্রোস।
১৮৩৪ সালে মন্ট্রিলে কঘনাওয়াগা ইন্ডিয়ানদের দ্বারা ল্যাক্রোসের একটি প্রদর্শনী দেওয়া হয়েছিল।
ফলস্বরূপ, কানাডায় গেমটির প্রতি আগ্রহ তৈরি হতে শুরু করে।
একজন কানাডিয়ান ডেন্টিস্ট, ড. উইলিয়াম জর্জ বিয়ার্স, ১৮৫৬ সালে প্রথম সাংগঠনিকভাবে কানাডায় মন্ট্রিল ল্যাক্রোস ক্লাব প্রতিষ্ঠিত সূচনা করেন।
যা ১৮৬০ সালে নাগাদ, ল্যাক্রোস কানাডার জাতীয় গ্রীষ্মকালীন খেলা হয়ে ওঠে এবং ১৮৬৭ সালে ইংল্যান্ডে প্রদর্শনী গেম খেলা হয়। ১৮৭৬ সালে, রানী ভিক্টোরিয়া একটি খেলা দেখেছিলেন এবং মন্তব্য করেছিলেন যে খেলাটি “দেখতে খুব সুন্দর”।
১৯০০খ্রিস্টাব্দে ল্যাক্রোস শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জনপ্রিয়তা অর্জন করে, যার ফলে স্কুল ও কলেজে বিভিন্ন ল্যাক্রোস লীগ প্রতিষ্ঠা হয়।
খেলাটি কানাডা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি যুক্তরাজ্য এবং অস্ট্রেলিয়া জুড়ে ছড়িয়ে পড়তে থাকে।
১৯০৪/১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে ল্যাক্রোস সেন্ট লুইস এবং লন্ডনের অলিম্পিক গেমসে অন্তর্ভুক্ত হয়ে খেলা হয়েছিল।
পরবর্তীতে ১৯২৮/১৯৩২/১৯৪৮ সালে ল্যাক্রোসকে তিনটি অতিরিক্ত অলিম্পিক গেমসে একটি প্রদর্শনী খেলা হিসেবে দেখানো হয়েছিল।
কলেজিয়েট এবং পেশাদার ফর্ম তৈরি করতে বর্তমান খেলাটি ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়েছে।
বহু বছর পরেও ল্যাক্রোস সারা বিশ্বে খেলা একটি জনপ্রিয় খেলা।
*তালহা জুবায়েরে✍️
★ল্যাক্রোস খেলার নিয়মঃ
ল্যাক্রোস একটি দ্রুতগতির শক্তি প্রদর্শনী ও শৃঙ্খলার খেলা। ল্যাক্রোস অনেকটাই একটি দলগত খেলা যেখানে দলের প্রত্যেককে মহত্ত্ব অর্জনের জন্য একটি ইউনিট হিসাবে একসাথে কাজ করতে হয়।
এই দলবদ্ধতা ঐক্য কেবল মাঠেই সীমাবদ্ধ থাকে না,মাঠের বাইরেও কার্যকরী ভুমিকা রাখে।
ল্যাক্রোস মাঠে দুটি দলে ১০জন করে খেলোয়াড় থাকে, ৩জন ডিফেন্স, ৩জন মিডফিল্ডার, ৩জন অফেন্সিভ ও ১জন গোলরক্ষক।
মাঠের আকৃতি একটি আয়তক্ষেত্রাকার ১১০ মিটার লম্বা এবং ৬০মিটার প্রস্থ, মাঠের সাইডলাইন চারদিকে সাদা রং দিয়ে চিহ্নিত করা এবং মাঠের দুই প্রান্তে ৬/৬ফিট ক্রসবার দ্বারা সংযুক্ত দুটি উল্লম্ব গোল পোস্ট থাকে।
উভয় দলের খেলোয়াড়দের সাথে সাধারণত প্লাস্টিক বা ফাইবারের তৈরি স্টিক থাকে যা দ্বারা খেলোয়াড়রা বল নিক্ষেপ, পাস এবং বল রিসিভ করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করে থাকে। স্টিকটি সাধারণত উপরিভাগে বল আটকানোর জন্য নেট এবং লম্বায় সর্বোচ্চ ১২ইঞ্চি হয়ে থাকে।
বলটি মূলত রাবার দিয়ে তৈরি,এর পরিধি ৭.৭৫ ইঞ্চি ও ৮ ইঞ্চি এবং ওজনে ৫ আউন্স এর মত, যা সাদা বা কমলা রংয়ের হয়ে থাকে।
দুই দলেরই প্রতিপক্ষের গোলবারের মধ্যে স্কোর বা গোল করার লক্ষ থাকে। আবার একে অপরকে (ডিফেন্স) বাধা দিয়ে বল সুরক্ষিত করার চেষ্টা করে প্রতিপক্ষের লক্ষ্যে প্রবেশ করা এবং স্কোর করা থেকে বিরত রাখতে। ইহা সাধারণত ফুটবল বা হকি খেলার সাথে তুলনা করা যায়।
গোলরক্ষক ছাড়া অন্য খেলোয়াড়রা হাত দিয়ে বল স্পর্শ বা যেকোন দিকে লাথি মারা,অবৈধ আচরণ বিধিনিষেধ সাপেক্ষে পেনাল্টি হিসেবে গণ্য হবে।
ম্যাচটি ১৫ মিনিট সময়কালের ৪টি পিরিয়ডে বিভক্ত হয়ে ৬০মিনিটের মধ্যে হবে।
এক্ষেত্রে প্রথম এবং দ্বিতীয় কোয়ার্টার, তৃতীয় এবং চতুর্থের কোয়ার্টারে মধ্যকার ২মিনিটের ব্যবধানে খেলা শুরু করতে হবে। দ্বিতীয় কোয়ার্টারের পরে ১০মিনিট হাফ-টাইম বিরতির অতিরিক্ত সময় ধরা হবে।
চতুর্থ পিরিয়ডে যে দল সর্বোচ্চ সংখ্যক গোল করবে তাকে খেলার বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। অপরপক্ষে গোলের সমতা হলে ২-মিনিট বিরতির পরে, ওভারটাইমে সময় যোগ করে খেলার বিজয়ী নির্ধারণ করা হয়। এক্ষেত্রে যেকোনো দলের একটি গোল না হওয়া পর্যন্ত ৪-মিনিট করে সময়কাল বৃদ্ধি করে এইভাবে চূড়ান্ত বিজয়ী নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।
★তালহা জুবায়েরে✍️